শোধ-প্রতিশোধের স্বাধীনতা

চব্বিশের ছাত্র আন্দোলনের সময় এবং হাসিনার পতনের পর এখন পর্যন্ত চলমান সহিংসতায় সব মিলিয়ে কয়েক লাখ প্রতিশোধের জালে জড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। আগামী পঞ্চাশ-একশ বছর ধরে দেশের মানুষ এই প্রতিশোধের আগুনে পুড়বে। এর সাথে ঐতিহাসিক সব প্রতিহিংসা তো আছেই।

এ যাত্রায় ক্ষমতাসীনদের নিষ্ঠুরতার ক্ষোভ মোটাদাগে ব্যক্তি হাসিনা, এবং দলগতভাবে ছাত্রলীগ ও পুলিশের ওপর পড়েছে। কিন্তু হাসিনার পতনের পরের শোধ-প্রতিশোধের হিসাবগুলো একেবারেই ব্যক্তিগত। আক্রান্ত এবং আক্রমণকারীরা একে অপরকে চেনে, চৌদ্দ গোষ্ঠীর খবর তারা জানে। কোনো বিচার, কোনো অনুশোচনা, কোনো ক্ষমা প্রার্থনায় এই প্রতিশোধের আগুন নিভবে না।

ড. ইউনূসকে কাছ থেকে বিএনপি-জামাত-হেফাজত এবং দূর হতে আওয়ামী লীগ ঘোল খাইয়ে ছেড়ে দিবে। যথাসময়ে তিনি বিদায় হবেন, যেমন হয়েছিল ফখরুদ্দিন। পাঁচ বছরের মধ্যে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়াবে। হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করা না গেলে দশ বছরের মধ্যেই বিপুল জনসমর্থন নিয়ে তার পরিবার দেশে ফিরবে।

এই দেশের মানুষের দুর্গতির হাজারটা কারণ আছে। তবে মোটা দাগে ধর্মানুভূতি, দাসমনস্কতা আর কুয়ারামার্কা আবেগ থেকে বের হতে না পারলে এদের শনির দশা কাটবে না। এই প্রজন্ম হুট করে অনেক কিছু ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে, কিন্তু এদের কুয়ারার ঘনত্ব বিপদজনক মাত্রায় বেশি। কিছুদিনের মধ্যেই এরা প্রতারিত বোধ করবে। এবং যথারীতি বছরের পর বছর লীগ-বিএনপির মাইর খাবে, ফখরুদ্দিন-ইউনূসের মতো দুধের মাছিদের দ্বারা প্রতারিত হবে, এবং এক দেড় দশক পর পর রুখে দাঁড়াবে, তারপর আবার মারা খাবে, আবার প্রতারিত হবে। — এভাবেই চলতে থাকবে।

তবে হ্যাঁ, একটা মিরাকল ঘটলে এই জাতির আপাত মুক্তি হবে। সেটা হল, বাম দলগুলো যদি বর্তমান প্রজন্মের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে, আমূল বদলে গিয়ে দল হিসেবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তাহলে অন্তত শ্বাস নেয়ার মত স্পেস তৈরি হবে। না হলে নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *